চীনের প্রাচীর
চলুন জেনে নেই চীনের প্রাচীন সম্পর্কে, কেন তৈরি করা হয়েছিল, কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং তৈরি করার সময় কি কি হয়েছিল।
চীনের এই প্রাচীকে বলা হয়
The Great Wall of China......
চীনের প্রাচীর কেন এত বড়
![]() | |
চীনের মহাপ্রাচীর | |
২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার বিস্তৃত এই প্রাচীর।
এই প্রাচীর তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই হাজার বছর।
এবং এ প্রাচীর তৈরি করতে গিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।
তখনকার সময় এই প্রাচীর তৈরি করতে অনেক অনেক সাম্রাজ্য দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল।বড় বড় নদী নালা সমুদ্র পাহাড় পেরিয়ে এই প্রাচীর বিস্তৃত।
এটা কে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানুষের তৈরি কোন গঠন বা আবিষ্কার। এবং এটি একটি অপূর্ব সুন্দর নিদর্শন।
চলুন এ প্রাচীর সম্পর্কে সবকিছু জানা যাক।
এটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাচীর।
তবে এটি কোন সোজা প্রাচীর নয় অনেকগুলো খন্ড জোড়া দিয়ে তৈরি এই প্রাচীর টি।
কে প্রাচীরের এক একটি অংশ বিভিন্ন দিকের বিস্তারিত রয়েছে।
সব খন্ড যোগ করে কে প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার।
এ প্রাচীর কত বড় তা ধারণা দেওয়ার জন্য আপনাকে বলা যেতে পারে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ২৬ বার যাওয়া আসা করলে এ প্রাচীরের সমান হবে।
এ প্রাচীর চীনের উত্তর দিকে তৈরি বরফে ঢাকা মরুভূমি থেকে শুরু করে ইয়োলো রিভার পর্যন্ত বিস্তারিত।
এর পথে রয়েছে পশু পাহাড় খারাপ পাথরের অঞ্চল শুষ্ক মরুভূমি বড় সাব্বিত এলাকা সমুদ্র নদী পুকুর ইত্যাদি। প্রকৃতির নানা রকম দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে প্রাচীর বিস্তৃত।
যা অনেক দূর থেকে দেখা যায়।চীনের মানুষ একে বলে পাথরের ড্রাগন। যা বিদেশে আক্রমণ থেকে চীনকে সব দিক থেকে রক্ষা করে থাকে।
এটি কেন তৈরি করা হয়েছিল তা জানতে আমাদেরকে ২০০০ বছর আগে যেতে হবে।
যে সময়টিতে চীনের একটি প্রদেশে মানুষ কৃষিকাজ করতো।
সে সময় চীনের আশেপাশে মঙ্গোলিয়া, মাঞ্চুরিয়া, ও শিংচিয়ান এর মতো কিছু সাম্রাজ্য ছিল।
শিংচিয়ান সাম্রাজ্যের মানুষজন অনেক শান্ত এবং সুসংগঠিত,
এরমধ্যে মঙ্গলীয় সাম্রাজ্যের কিছু উপজাতি শিংচিয়ান প্রদেশে হানা দিয়ে লুটপাট এবং অত্যাচার করতো।
এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য চীনের কিছু মানুষ একজন রাজা নির্বাচন করেন।
এবং সেই রাজা চীনের সীমান্তকে নির্ধারণ করে দেয়।
এবং সেই সীমান্ত জুড়ে উঁচু প্রাচীর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সেই সময় সম্রাট কিং সিন হুয়ান 223 খ্রিস্টপূর্বে এ মহাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।
তবে এই দীর্ঘ প্রাচীর একক কোন সাম্রাজ্যের তৈরি করার সাধ্য বা ক্ষমতা ছিল না তখনকার সময়।
তাই পরবর্তীতে আরো অনেক সাম্রাজ্য একত্রিত হয়ে এ প্রাচীর বানানোর কাজ শুরু করে।
এবং সব সাম্রাজ্য একসাথে এ কাজে অংশগ্রহণ করার পরে এ প্রাচীর তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় দুই হাজার বছর।
তখনকার সময় চীনের সবথেকে দক্ষ এবং প্রকৌশলী মানুষগুলোকে এ কাজে নিযুক্ত করেছিলেন।
বিষ লক্ষরও বেশি শ্রমিক এ কাজে অংশগ্রহণ করেন।
এখানে অনেক সাধারণ মানুষও কাজ করতো এবং যারা কারাগারে বন্দী থাকতো তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে এই কাজে লাগায় দেয়া হতো তাদের শাস্তি হিসেবে।
কারাগারে বন্দি থাকা মানুষগুলোর শাস্তি হিসেবে তখন চীনের প্রাচীর তৈরিতে কাজ করতে হতো।
এ প্রাচীর তৈরি করতে অনেক শ্রমিককে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
বলা যেত টানা দুই বছর এত গতিতে কাজ চলতো যে শ্রমিকরা অনেক বছর তার বাসায় বাড়িতে যেতে পারত না।
প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ ঘন্টা তাদেরকে কাজ করতে হতো।
অথচ তারা ভালো করে খেতে পেত না।
অনেক কষ্ট করে তাদের কাজ করে যেতে হতো বছরের পর বছর। চীনের কিছু কিছু নিষ্ঠুর শাসকরা তাদের উপর অমানবিক অত্যাচার করত।
রাতে তারা চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পেতো এবং তারা প্রাচীরের আশেপাশে কোন একটা জায়গায় ঘুমিয়ে পড়তো।
ভালো করে পেট ভরে খেতে পেত না গোসল করত না এই করে বছরের পর বছর অনেক কষ্ট করে এই প্রাচীর তারা তৈরি করে।
রাতে বাইরে ঘুমানোর জন্য অনেক ঠান্ডা তে অনেক মানুষের অনেক ধরনের অসুখ বিসুখ হতো এগোরে অনেক মানুষ মারা গেছে। আবার কেউ কেউ না খেতে পেয়েও মারা যেত।
আবার কেউ কেউ প্রাচীর বানাতে লেগে প্রাচীন থেকে মাটিতে পড়ে মারা যেতেন। এভাবে লক্ষাদিক মানুষ এ প্রাচীর তৈরিতে মারা গিয়েছেন।
তাদের লাশ সেখানেই পড়ে থাকত যেখানে তারা মারা যেত।
প্রাচীরের পাশেই গর্ত করে তাদের কবর দিয়ে রাখা হতো। এ প্রাচীন নির্মাণে পাঁচলক্ষরও বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিল। যাদের দেহ এখনো এ প্রাচীরের নিচে মাটি দেওয়া আছে।
একটি হিসাব অনুযায়ী চীনের মহাপ্রাচিল তৈরির মূল অংশের কাজ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে।
এই কারণেও চীনের এ মহাকাশীরকে বিশ্বের সবথেকে বড় সমাধিস্থান বলা হয়ে থাকে।
আরোও পড়ুনঃ প্রাচীর তৈরিতে আরো কি কি ঘটনা ঘটেছে।
তখন তো সিমেন্ট ছিল না তাহলে কি দিয়ে এত শক্ত পোক্ত একটা প্রাচীর তৈরি করা হলো?
চলুন জেনে নিই কি কি দিয়ে এ প্রাচীর তখন তৈরি করা হয়েছিল।
এই প্রাচীর তৈরিতে ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ইট মাটি দিয়ে বানিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আগুনে পোড়ানো হতো।
কিন্তু এই ইটের আকার অনেক বড় ছিল আজকের তুলনায় চার গুণ বড় ছিল তখনকার ইট।
প্রাচীর তৈরির লাগে এর ভিত্তি বা বেসমেন্টে বসানো হত গ্রানাইট পাথর।
আর অন্যপাশে দেওয়া হতো বিশেষ ধরনের চিনামাটি।
যাতে বহিরাগত শত্রু কোন যুদ্ধ লাগলে সহজে দেওয়াল বেয়ে উঠতে না পারে।
ইটগুলো জোড়া লাগাতে ব্যবহার করা হতো চুন ও চালের গুঁড়ো মিশ্রিত জল।
এ মহাপ্রাচীর তৈরি করতে ৫০০০০ কোটিরও বেশি ইট লেগেছিল। এখানে কয়েকশো কোটি টন চুন এবং চালের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়েছিল।
এ প্রাচীরের গড় উচ্চতা ২৩ ফুট, এবং প্রস্থ ছিল ২১ ফুট।
আবার কোথাও কোথাও এর প্রাচীরের উচ্চতা 9 ফুট আবার কোথাও কোথাও এ প্রাচীরের উচ্চতা ৪০ ফুট চলে গিয়েছে। কিন্তু চীনের কিছু কিছু মানুষ বলে এটি একটি অপ্রয়োজনীয় নির্মাণ।
এই প্রাচীরে মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক সুবিধা।
এটি সাধারণত শত্রুকে আটকানোর জন্য এ প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল।
যাতে কোন শত্রু অনেক সহজেই আক্রমণ করতে না পারে।
প্রতি ১০০ মিটারের মধ্যে একটি করে উঁচু ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। এখানে সব সময় একটি করে সৈনিক নিয়োজিত থাকতো।
যাতে কোন শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে তার সাথে সাথে তারা দেখতে পায় এবং অনেক তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিতে পারে।এ প্রাচী জোরে এরকম প্রায় পঁচিশ হাজার ওয়াচ টাওয়ার ছিল।
যার মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ সৈন্য থাকতে পারতো।
যদি কোন ১৭ আশঙ্কা পেতো তাহলে সে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পতাকা উড়িয়ে বোঝানো হতো যে শত্রু আক্রমণ করতে চলেছে। আর রাতে আগুন জ্বালিয়ে সংকেত দিত।
এটা ওরে কিছু কিছু জায়গায় অনেক ঘর ছিল সেখানে তারা সবসময় থাকতো কোন যুদ্ধের বা কোন আক্রমণে খবর পেলে তারা অনেক তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যেত।
সেখানে তারা মাসের পর মাস থেকে যেত।
এখানে খাওয়া-দাওয়া করতে সেখানেই ঘুমাতো।
এ প্রাচীরের নিচে অনেক সুরঙ্গ ছিল যার মধ্যে দিয়ে এই সৈন্যরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে যেতে পারতো।এবং এগুলোর পথ শুধুমাত্র তারাই জানত।
কিন্তু কেউ কেউ এ প্রাচীর কে ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে মনে করে।
কারণ এত শক্ত একটা প্রাচীর এত বড় একটি প্রাচীর থাকা শর্তেও অন্যান্য বিদেশি আক্রমণকারীরা চীনে হামলা করেছিল দুই তিনবার এর মত ।
তখনকার যুগে সবথেকে ভয়ানক শাসক চেঙ্গিস খান এ প্রাচীর ভেদ করে চীনে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়।
যার কারণে কিছু কিছু মানুষ এ প্রকল্পকে ব্যর্থ প্রকল্প বলতো।
তখনকার সময় এক আক্রমণকারী গোষ্ঠী চীনকে দখল করে তখন সে সরকারের পতন করে এবং তারা চীনে রাজত্ব শুরু করে।
যাই হোক সব মিলিয়ে চীনের ইতিহাসে এ প্রাচীরের গুরুত্ব অপরিসীম।
আজও প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করে চীনের মহাপ্রাচীর দেখার জন্য।
হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ ইট পাথর দিয়ে তৈরি এটি একটি জীবন্ত নিদর্শন।
শৌভিক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url